পাকিস্তানে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর আরোপিত বিক্রয় কর ও শুল্ককে চ্যালেঞ্জ করে লাহোর উচ্চ আদালতে পিটিশন দায়ের করে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন ২৫ বছর বয়সী আইনজীবী মাহনূর ওমার। তিনিসহ বহু অধিকারকর্মীর কাছে এই কর ‘মাসিক কর’ (Period Tax) নামে পরিচিত। এই পিটিশনের লক্ষ্য হলো, পাকিস্তানের ১০ কোটির বেশি নারীর জন্য মাসিককালীন স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে নতুন করে গড়ে
পাকিস্তানে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর আরোপিত বিক্রয় কর ও শুল্ককে চ্যালেঞ্জ করে লাহোর উচ্চ আদালতে পিটিশন দায়ের করে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন ২৫ বছর বয়সী আইনজীবী মাহনূর ওমার। তিনিসহ বহু অধিকারকর্মীর কাছে এই কর ‘মাসিক কর’ (Period Tax) নামে পরিচিত। এই পিটিশনের লক্ষ্য হলো, পাকিস্তানের ১০ কোটির বেশি নারীর জন্য মাসিককালীন স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে নতুন করে গড়ে তোলা।
মাসিক স্বাস্থ্য এবং করের বোঝা
রাওয়ালপিন্ডিতে বেড়ে ওঠা মাহনূর স্মরণ করেন, মাসিকের সময় স্কুলে গিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন লুকিয়ে টয়লেটে যাওয়াটা তাঁর কাছে কোনো অপরাধ ঢাকার চেষ্টার মতো মনে হতো। তিনি বলেন, একবার এক সহপাঠী তাঁকে বলেছিল, স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনা তাঁর মায়ের কাছে ‘অর্থের অপচয়’। এই ঘটনা মাহনূরকে নাড়া দেয়। তিনি মনে করেন, যেখানে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এভাবে চিন্তা করে, সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে এই পণ্যগুলো আরও দুষ্প্রাপ্য।
পাকিস্তানি সরকার ১৯৯০ সালের সেলস ট্যাক্স আইনের অধীনে দেশে উৎপাদিত স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর ১৮ শতাংশ বিক্রয় কর আরোপ করেছে। আমদানি করা ন্যাপকিনের পাশাপাশি এর কাঁচামালের ওপর ২৫ শতাংশ কাস্টমস শুল্ক আরোপ করা হয়। ইউনিসেফ পাকিস্তানের মতে, অন্যান্য স্থানীয় কর যোগ করলে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর মোট কর দাঁড়ায় প্রায় ৪০ শতাংশ।
সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ
পেশায় আইনজীবী মাহনূর ওমারের পিটিশনে বলা হয়েছে, নারীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলা এই কর বৈষম্যমূলক। এর মধ্য দিয়ে সংবিধানের সেই ধারাগুলো লঙ্ঘন করা হয়েছে, যেগুলো সাম্য, মর্যাদা, শোষণের অবসান ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।
পাকিস্তানে এক প্যাকেট স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে প্রায় ৪৫০ রুপি (১.৬০ ডলার) খরচ হয়। যে দেশে মাসিক মাথাপিছু আয় মাত্র ১২০ ডলার, সেখানে এক প্যাকেট ন্যাপকিনের দাম নিম্ন আয়ের চার সদস্যের এক বেলার খাবারের খরচের সমান। ইউনিসেফ-এর এক গবেষণা অনুযায়ী, বর্তমানে পাকিস্তানের মাত্র ১২ শতাংশ নারী বাণিজ্যিকভাবে তৈরি স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন।
সামাজিক পরিবর্তন ও আইনি লড়াই
মাহনূর ওমারের পিটিশনের সহ-আবেদনকারী ও কর বিশেষজ্ঞ আহসান জাহাঙ্গীর খান বলেন, করের বিরুদ্ধে এই লড়াই শুধু স্যানিটারি ন্যাপকিনকে সহজলভ্য করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি ন্যায়বিচারেরও বিষয়। এটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার ওপর আরোপিত কর। অধিকারকর্মীরা আশা করছেন, এই পিটিশন ভারত, নেপাল ও যুক্তরাজ্যের মতো পাকিস্তান সরকারকেও ‘মাসিক কর’ বাতিল করতে বাধ্য করবে।
১৬ বছর বয়সে মাহনূর ও তাঁর বন্ধুরা ইসলামাবাদের নিম্ন আয়ের এলাকায় নারীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন, অন্তর্বাস ও ব্যথানাশক ওষুধসহ ‘ডিগনিটি কিট’ তৈরি করে বিতরণ শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে স্নাতকোত্তর পড়ছেন এবং পরে দেশে ফিরে তাঁর কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করছেন।
Channel July 36 







Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *