ইসলামী শরিয়ত হলো মহান আল্লাহ তাআলা কর্তৃক তাঁর বান্দাদের জন্য মনোনীত সেই পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের করণীয়, বর্জনীয়, হালাল ও হারামের সীমারেখা স্পষ্ট করে দিয়েছে। শাব্দিকভাবে ‘শরিয়ত’ শব্দের অর্থ হলো সেই পথ বা উৎস, যেখানে মানুষ পানি পান করে বা আরোহণ করে। আল্লামা ইবনু হাজম (রহ.)-এর মতে, শরিয়ত হলো সেই সব ঐশী বিধান, যা
ইসলামী শরিয়ত হলো মহান আল্লাহ তাআলা কর্তৃক তাঁর বান্দাদের জন্য মনোনীত সেই পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের করণীয়, বর্জনীয়, হালাল ও হারামের সীমারেখা স্পষ্ট করে দিয়েছে। শাব্দিকভাবে ‘শরিয়ত’ শব্দের অর্থ হলো সেই পথ বা উৎস, যেখানে মানুষ পানি পান করে বা আরোহণ করে। আল্লামা ইবনু হাজম (রহ.)-এর মতে, শরিয়ত হলো সেই সব ঐশী বিধান, যা আল্লাহ তাঁর নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং পূর্ববর্তী নবীদের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য প্রণয়ন করেছেন।
শরিয়ত মূলত দ্বীন ইসলামের বিশ্বাস এবং কর্মগত সকল বিধি-বিধানের সমষ্টি, যা আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে ওহির মাধ্যমে দুনিয়ার মানুষের কাছে পাঠিয়েছেন।
শরিয়তের ১০টি অনন্য বৈশিষ্ট্য
১. শরিয়ত মানেই ইসলাম: আল্লাহ তাআলা ইসলামকে মানুষের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে একে পরিপূর্ণ করেছেন (সুরা মায়েদা: ৩)। শরিয়াহ হলো সেই বিধান ও আইন-কানুন, যা কোরআন ও রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে নির্ধারিত। ২. শরিয়ত আল্লাহর ওহি (প্রত্যাদেশ): শরিয়তের ঈমান, আমল, ও আখলাকের সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ওহি। এটি কোনো মানবসৃষ্ট ব্যবস্থা নয়, বরং কোরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে প্রেরিত ঐশী দিকনির্দেশনা (সুরা শূরা: ৫২)। ৩. শরিয়ত পরম সত্য: এই ঐশী প্রত্যাদেশ সম্পূর্ণ নির্ভুল, বিকৃতিমুক্ত ও পরম সত্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমার সম্প্রদায় এটি অস্বীকার করেছিল, অথচ এটি তো সত্য।” (সুরা আনআম: ৬৬)। ৪. শরিয়ত নিখুঁত ও চিরসংরক্ষিত: এর মূল উৎস কোরআনুল কারিম স্বয়ং আল্লাহর সংরক্ষণে রয়েছে (সুরা হিজর: ৯)। তাই শরিয়ত কখনো বিকৃতি, সংযোজন বা বিয়োজনের প্রয়োজন হবে না। ৫. পূর্ণ আনুগত্য বাধ্যতামূলক: যেহেতু শরিয়াহ স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত, তাই একজন মুসলিমের জন্য এর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য, সম্মান এবং নির্বিচারে আত্মসমর্পণ করা বাধ্যতামূলক। আল্লাহ বলেন, “তারা প্রকৃত অর্থে ঈমান আনবে না যতক্ষণ না তারা তোমাকে (হে মুহাম্মদ) তাদের পারস্পরিক বিরোধের বিষয়ে বিচারক হিসেবে গ্রহণ করে…” (সুরা নিসা: ৬৫)। ৬. ইবাদত ও দাসত্বের প্রকাশ: শরিয়াহর মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদত প্রতিষ্ঠা করা। এটি মানুষকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ দাসত্ব ও আনুগত্য প্রকাশ করতে শেখায়। ৭. অনুসরণ অবিচ্ছেদ্য কর্তব্য: শরিয়াহ এত পূর্ণাঙ্গ ও সত্যনিষ্ঠ যে এর বিধান, আয়াত বা প্রমাণিত হাদিসের বিরোধিতা করা কারো পক্ষেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর অনুসরণই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একমাত্র উপায় (সুরা জাসিয়াহ: ১৮)। ৮. অর্থে স্পষ্ট, ব্যাখ্যায় বিশদ: শরিয়তের প্রতিটি আয়াত স্পষ্ট, সুস্পষ্ট ও নির্ভুল। আল্লাহ তাআলা কোরআনকে এমনভাবে নাজিল করেছেন, যাতে সব কিছুর স্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে এবং তা মুসলিমদের জন্য পথনির্দেশ, রহমত ও সুসংবাদ (সুরা নাহল: ৮৯)। ৯. মানবজাতির কল্যাণ রক্ষায় যথেষ্ট: শরিয়ত ইহকাল ও পরকাল উভয় ক্ষেত্রেই মানবজাতির স্বার্থ ও কল্যাণ রক্ষায় সম্পূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এটি মানুষকে সর্বাপেক্ষা সরল পথের দিকে পরিচালিত করে (সুরা ইসরা: ৯)। ১০. মুসলিম পরিচয় ও মর্যাদা নির্ধারণকারী: শরিয়াহ জাতি, বর্ণ বা সামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে নয়, বরং তাকওয়া (আল্লাহভীতি ও ধার্মিকতা) দ্বারা একজন মুসলিমের মর্যাদা ও পরিচয় নির্ধারণ করে। আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের নাম ‘মুসলিম’ রেখেছেন (সুরা হজ: ৭৮)।
Channel July 36 








Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *